জাতীয়



সিলেট মিরর ডেস্ক

অগাস্ট / ২৯ / ২০২৪


সাবেক এমপিদের ৫২ বিলাসবহুল গাড়ি বিক্রি করবে সরকার


49

Shares


এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে কম দামের ল্যান্ড ক্রুজারটি আমদানি করা হয়েছে প্রায় ৯৮ লাখ টাকায়। শুল্ক দিতে গেলে গাড়িটির দাম পড়বে প্রায় আট কোটি ১০ লাখ টাকা। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আনা তিন হাজার ৩৪৬ সিসির এ গাড়িটির স্বাভাবিক শুল্ককর হার ৮২৬ দশমিক ৬ শতাংশ।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের সাবেক সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা ৫২টি বিলাসবহুল গাড়ি ছাড় করার আগেই শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দেওয়ার কারণে ওসব গাড়ি বিক্রি করে শুল্ককর আদায় করবে সরকার।

বুধবার (২৮ আগস্ট) সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ব্যবসায়ীদের নিয়ে এক সভায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে এ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন বলে সভা শেষে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, বন্দরে আটকে পড়া সাবেক এমপিদের আমদানি করা শুল্কমুক্ত গাড়িগুলো ফেরত পাঠানো হবে না। এগুলো ফেরত পাঠালে বাংলাদেশ রাজস্ব হারাবে।

সভায় উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা জানান, এসব গাড়ির বেশিরভাগই টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার ও ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো। সহজ শর্তে বাজারমূল্যে এসব গাড়ি বিক্রি করতে এনবিআরকে নির্দেশনা দিয়েছেন উপদেষ্টা।

মুলত পণ্য আমদানি ও মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে এ সভার আয়োজন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বৈঠকে এফসিসিআইয়ের প্রতিনিধি, আমদানিকারক, ট্যারিফ কমিশন, এনবিআর প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনেরা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় রাজস্ব আহরণ প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনায় সাবেক এমপিদের আমদানিকৃত গাড়ির প্রসঙ্গটি তুলে এসব গাড়ির বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা চান এনবিআরের কর্মকর্তারা। শুল্কমুক্ত সুবিধায় ৫২টি গাড়ির আমদানিমূল্য প্রায় ৭০ কোটি টাকা। শুল্কসহ প্রতিটি গাড়ির দাম পড়বে ৮–১০ কোটি টাকার বেশি।

তখন উপদেষ্টা তাদের জানান, এ মুহূর্তে রাজস্ব দরকার আছে। গাড়িগুলো বিক্রি করা হলে অনেক রাজস্ব আয় হবে। ফলে বাজারমূল্যে নির্ধারিত শুল্ক দিয়ে গাড়িগুলো বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতি অনেকে এসব গাড়ি কিনতে সাহস পাবেন না। তবে এক্ষেত্রে বিক্রির জন্য কিছু শর্ত সহজ করতে হবে। তাহলে এসব গাড়ি বিক্রির মাধ্যমে রাজস্ব আদায় হবে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদের এমপিদের ৫২টি গাড়ি বন্দরে এসে পৌঁছেছে। আরও কিছু গাড়ি আমদানি পর্যায়ে রয়েছে।

কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, শুল্কমুক্ত সুবিধার কাগজপত্র দিয়ে এসব গাড়ি আনা হলেও সংসদ ভেঙে দেওয়ায় আর সে সুবিধা পাওয়া যাবে না। এখন স্বাভাবিক শুল্ক-কর দিয়ে গাড়িগুলো খালাস করতে হবে।

এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে কম দামের ল্যান্ড ক্রুজারটি আমদানি করা হয়েছে প্রায় ৯৮ লাখ টাকায়। শুল্ক দিতে গেলে গাড়িটির দাম পড়বে প্রায় আট কোটি ১০ লাখ টাকা। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আনা তিন হাজার ৩৪৬ সিসির এ গাড়িটির স্বাভাবিক শুল্ককর হার ৮২৬ দশমিক ৬ শতাংশ।

শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়িগুলো আমদানি করেছেন সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক ও মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক সংসদ সদস্য ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ, নেত্রকোনার সাবেক সংসদ সদস্য সাজ্জাদুল হাসান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাবেক সংসদ সদস্য এসএকে একরামুজ্জামান, ফয়জুর রহমান, সিরাজগঞ্জের চয়ন ইসলাম, জান্নাত আরা হেনরি, নাটোরের আবুল কালাম, সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী, বগুড়ার মজিবুর রহমান মঞ্জু, রেজাউল করিম তানসেন, টাঙ্গাইলের অনুপম শাহজাহান জয়, হবিগঞ্জের ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন, সুনামগঞ্জের রনজিৎ সরকার, ড. সাদিক, গাইবান্ধার আবুল কালাম আজাদ, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, যশোরের নওয়াব আলী জোয়ার্দার, ঝিনাইদহের নাসের শাহরিয়ার জাহিদি, লক্ষ্মীপুরের মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী ও দিনাজপুরের মুহাম্মদ জাকারিয়া।

এদের মধ্যে ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের কয়েকদিন আগে সাবেক সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসান, চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদসহ কয়েকজন গাড়ি খালাস করে ফেলেছেন। জানা যায়, শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা ওসব গাড়ির বেশির ভাগ জাপান ও সিঙ্গাপুর থেকে আমদানি করা হয়েছে। এরমধ্যে টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার, টয়োটা জিপ, টয়োটা এলসি স্টেশন ওয়াগট মডেলের গাড়িগুলোর ইঞ্জিন ক্যাপাসিটি ৪ হাজার সিসি।

সংরক্ষিত আসনে সদস্যদের মধ্যে বিলাসবহুল গাড়ি আমদানি করেছেন তারানা হালিমসহ কয়েকজন।


ওয়াইএফ /০১

জাতীয়