107
Sharesঅবৈধভাবে অনুপ্রবেশসহ বিভিন্ন অভিযোগে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় গ্রেপ্তার হওয়া সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খানসহ ৫ আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাকে কারাগারে পাঠিয়েছে মেঘালয় রাজ্যের একটি আদালত।
মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পশ্চিম জৈন্তিয়া হিলস (পাহাড়) জেলার এমলারিয়াং বিচারক আদালত তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
ইমিগ্রেশনের দায়িত্বে থাকা জোয়াই পুলিশ স্টেশনের সাব ইন্সপেক্টর জে কে মাজাও এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, 'বাংলাদেশের ছয় নাগরিকসহ অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে ডাউকি পুলিশ স্টেশনে গত ১৬ আগস্ট একজন ট্রাক ড্রাইভার লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ১৯ আগস্ট মামলা রুজু করা হয়। এই মামলায় রবিবার ৫ জনকে কলকাতা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ডাউকি থানায় এদের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার চারটি ধারা এবং বিদেশি আইনের ১৪ নম্বর ধারায় অভিযোগের ভিত্তিতে তাদেরকে আজ আমলারিয়াং জুডিশিয়াল আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাদেরকে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।'
মামলার বিবরণ অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে Dawki PS Case No 19(10)/24 u/s 118(1)/309(4)/310(2)/324(4) BNS & 14 Foreigner's Act আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে বলেন, এজাহারে কারো নাম উল্লেখ না থাকলেও তদন্ত সাপেক্ষে এই ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ৪ জন পলাতক রয়েছেন। পরে আদালত শুনানি শেষে গ্রেপ্তারকৃতদের জোয়াই কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
পূর্বের সংবাদ: অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে নাসির উদ্দিন খানসহ ৪ আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার হন |
জোয়াই আদালতের আইনজীবী রাম সিং জানান, তাদের বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশ, ছিনতাই, জাতীয় সড়কে ডাকাতি, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট, ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত ও মারধরের অভিযোগ আনা হয়েছে।
বিদেশি আইন: ধারা 14 হচ্ছে, এটি ভারতে বিদেশিদের সঙ্গে সম্পর্কিত বিধান লঙ্ঘনের শাস্তির সাথে সম্পর্কিত। লঙ্ঘনগুলির মধ্যে ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও অবস্থান করা, বৈধ নথি ছাড়া দেশে প্রবেশ করা, অথবা নিবন্ধন সংক্রান্ত প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে ব্যর্থ হওয়া অন্তর্ভুক্ত। ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (BNS) এর ধারাগুলো হলো: ধারা 118(1) BNS: এটি বিপজ্জনক অস্ত্র বা উপায় দ্বারা স্বেচ্ছায় ক্ষতি করার সাথে সম্পর্কিত।
ধারা 309(4) BNS: এটি ডাকাতির শাস্তির সাথে সম্পর্কিত। যদিও উপ-ধারা (4)-এর সুনির্দিষ্ট বিবরণ এখানে উল্লেখ করা হয়নি, সাধারণত ডাকাতির মধ্যে চুরি এবং সহিংসতার ব্যবহার বা হুমকি অন্তর্ভুক্ত থাকে। ধারা 310(2) BNS: এটি ডাকাতি (Dacoity) এর সাথে সম্পর্কিত, যা পাঁচ বা তার বেশি ব্যক্তির মাধ্যমে সংঘটিত ডাকাতি। ধারা 324(4) BNS: এটি ডাকাতি করতে গিয়ে স্বেচ্ছায় ক্ষতি করার সাথে সম্পর্কিত। এগুলো জামিন অযোগ্য অপরাধ। এজন্য এজাহারভূক্ত ৪ জন ও অজ্ঞাত আসামি হিসেবে গ্রেপ্তারকৃত একজনসহ ৫ জনকে আদালত জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
জোয়াই অবস্থানরত সিলেটের একজন কয়লা ব্যবসায়ী জানান, পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বিধাননগর পৌরসংস্থার বাগুইআটি এলাকার একটি বাসা থেকে রবিবার সকালে ৫ জনকে স্থানীয় পুলিশের সহযোগিতায় গ্রেপ্তার করে মেঘালয় পুলিশ। বাগুইআটি কলকাতা মেট্রোপলিটন উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কেএমডিএ) আওতাধীন এলাকার একটি অংশ।
পুলিশের বরাত দিয়ে তিনি জানান গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, সিলেট মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তি, সিলেট মহানগর যুবলীগের সহ সভাপতি আব্দুল লতিফ রিপন ও সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যকরি কমিটির সদস্য ইলিয়াছ আহমদ জুয়েল ও সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার সিংচাপইড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ছাতক উপজেলা যুবলীগ নেতা সাহাব উদ্দিন সাহেল।
তিনি আরো জানান, রবিবার সকালে বাগুইআটির একটি ফ্ল্যাট বাড়ি থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে দুপুরে বারাসাত আদালতে নেওয়া হয়। পরে তাদেরকে সোমবার রাতে জোয়াই থানা হেফাজতে নিয়ে আসা হয়।
কলকাতায় অবস্থানরত সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, 'বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে অল্প ক’টি স্থল সীমান্ত পারাপারের মধ্যে ডাউকি-তামাবিল একটি। এটি মূলত বাংলাদেশে কয়লা ও পাথর পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হয়। ডাউকি এলাকায় পাথর ব্যবসা নিয়ে তাদের কারো কারো সঙ্গে স্থানীয়দের বিরোধ রয়েছে বলে তিনি শুনেছেন। এ কারণে সংক্ষুব্ধ কেউ এ মামলার নেপথ্যে থাকতে পারেন।'
ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন সময় তারা সিলেটের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলং যান। শিলং শহরে তারা প্রথমে পুলিশ বাজার এলাকার একটি হোটেলে অবস্থান নেন। পরে তারা শহরের একটি এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। গত ৫ নভেম্বর তারা শিলং থেকে কলকাতায় স্থানান্তরিত হন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, 'তারা ভারতে প্রবেশ করে শিলংয়ের লাইমক্রা পুলিশ স্টেশনে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেন। এবং ভারতে অবস্থানের অনুমোদন পান। হয়রানির উদ্দেশ্যে তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশ, ছিনতাই ও গাড়ি ভাঙ্গচুরের মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। '
বিভিন্ন গণমাধ্যমে ধর্ষনের অভিযোগে মামলা হয়েছে এ সংক্রান্ত খবরের বিষয়ে জানতে চাইলে নাদেল বলেন, 'সত্যাসত্য যাচাই না করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে মনগড়া সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে। মানুষের চরিত্র হনন করা অত্যন্ত নিম্নরুচির পরিচয়। এটা দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা হতে পারে না। তাদের ইমেজ ক্ষুন্ন করতে ও আওয়ামী লীগ কে বিতর্কিত করতে ধর্ষণকাণ্ডের ঘটনা ছড়ানো হয়েছে।'
জোয়াই আদালতে আসামীদের পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে জানিয়ে নাদেল বলেন, ' গ্রেপ্তারকৃত সকলই রাজনৈতিক নেতা। বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় তারা অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করতে বাধ্য হয়েছেন। আইনি প্রক্রিয়ায় আশা করি তারা শীঘ্রই মুক্তি লাভ করবেন।'
ওয়াইএফ/০১