27
Sharesমাস খানেক আগে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে যে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছিল, তাতে ‘উড়ন্ত নদীর’ যোগ দেখছেন বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের একদল গবেষক।
তারা বলছেন, গত ১৮ অগাস্ট একটি ‘উড়ন্ত নদীর’ অস্তিত্ব ছিল, যেটি বঙ্গোপসাগর থেকে কক্সবাজার-ত্রিপুরা হয়ে আরও উত্তরদিকে অবস্থান করছিল। অদৃশ্য এ আকাশ নদীর দৈর্ঘ্য ছিল ২ হাজার কিলোমিটারের বেশি, আর প্রস্থ ছিল ৫০০ কিলোমিটার।
উজানে পাহাড়ি ঢল আর অতি ভারি বৃষ্টির কারণে ২০ অগাস্ট থেকে ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালীসহ দেশের বিস্তীর্ণ এলাকায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। অল্প সময়ের মধ্যে বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়ার পর উপদ্রুতদের কেউ কেউ বলেছেন, জীবদ্দশায় বন্যার এমন ভয়াল রূপ দেখেননি।
এই বন্যায় ‘উড়ন্ত নদীর’ প্রভাব ছিল কি না তা খোঁজার চেষ্টা করেছেন বুয়েটের বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের একদল গবেষক, যাদের নেতৃত্ব দিয়েছেন সেখানকার সহযোগী অধ্যাপক শম্পা।
তিনি বলছিলেন, “উড়ন্ত নদীই এই অতি ভারি বৃষ্টির অন্যতম কারণ। আর অতি ভারি বৃষ্টির কারণে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বন্যাটা হয়েছে।
“এখানে অন্য ফেনোমেনাও কাজ করতে পারে। তবে উড়ন্ত নদীর ফলে বন্যার পরিমাণ অনেক বেশি হয়।”
সাধারণত ২৪ ঘণ্টায় ৮৮ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি রেকর্ড হলে তাকে বলা হয়ে থাকে অতি ভারি বৃষ্টিপাত।
ফ্লাইং রিভার বা উড়ন্ত নদীর ধারণা দিতে গিয়ে বুয়েটের এই শিক্ষক বলছেন, কোথাও ‘উড়ন্ত নদী’ তৈরি হলে এর প্রভাবে একদিনে অতি ভারি বৃষ্টি ঝরে।
“ধরুন কোনো এলাকায় যদি জুন মাসের স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয় ১০০ মিলিমিটার, বায়ুমণ্ডলে ‘উড়ন্ত নদী’ তৈরি হলে সেখানে একদিনেই ৩০০/৪০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়।”
এক একটি বায়ুমণ্ডলীয় নদীর দৈর্ঘ্য ২ হাজার কিলোমিটার, প্রস্থ ৫০০ কিলোমিটার এবং গভীরতা প্রায় ৩ কিলোমিটার হতে পারে। এমন নদী এখন আরও প্রশস্ত ও দীর্ঘতর হচ্ছে, কিছুক্ষেত্রে ৫ হাজার কিলোমিটারের বেশি দীর্ঘ নদীও দেখা গেছে। তবে এগুলো খালি চোখে মানুষ দেখতে পায় না।
নাসার জেট প্রোপালশন ল্যাবরেটরির বায়ুমণ্ডলীয় গবেষক ব্রায়ান কান বলেন, “ইনফ্রারেড ও মাইক্রোওয়েভ ফ্রিকোয়েন্সির সঙ্গে এগুলো দেখা যায়। সে কারণেই বিশ্বজুড়ে জলীয় বাষ্প এবং বায়ুমণ্ডলীয় নদী পর্যবেক্ষণের জন্য স্যাটেলাইট কার্যকর উপায় হতে পারে।"
আকাশে কেন এই নদী তৈরি হয়, এ প্রশ্নের উত্তরে ড. শম্পা বলেন, “লোকাল কনভেকশন সেলের কারণে হতে পারে, কোথাও গভীর নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে-তার পাশ থেকে উড়ন্ত নদী তৈরি হতে পারে।
“কোথাও সাইক্লোন হচ্ছে, ওই বায়ুপ্রবাহটাই উড়ন্ত নদী তৈরির একটা কারণ হিসেবে কাজ করছে; তবে সুনির্দিষ্টভাবে বলাটা কঠিন।”
উড়ন্ত নদীর কারণে খুব অল্প সময়ের মধ্যে খুব বড় বন্যা হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, “যেহেতু খুব অল্প সময়ে বেশি বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে প্রস্তুতি নেওয়ার মতো সময় কম পাওয়া যায়। সেজন্য পুরো বন্যা ব্যবস্থাপনাটাকেই উন্নত করতে হবে। সময় মতো সতর্কবার্তা দিতে হবে এবং সেখানে আশ্রয়কেন্দ্র কোথায় আছে-সেটা উল্লেখ করতে হবে।
“সবার আগে দ্রুত শনাক্ত করার সক্ষমতাটা বাড়াতে হবে। এর আগে কোথায় কোথায় উড়ন্ত নদীগুলো হিট করেছে, সে এলাকাগুলো শনাক্ত করতে হবে।”
যেভাবে ‘উড়ন্ত নদী’র অস্তিত্ব ধরা
বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আকস্মিক বন্যা দেখা দিলে ত্রিপুরার ডাম্বুর ড্যামের গেইট খুলে দেওয়াকে দায়ী করা হয়, বিক্ষোভ দেখানো হয় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে।
তার প্রতিক্রিয়ায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছিল, “২১ অগাস্ট থেকে পুরো ত্রিপুরা এবং বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ব্যাপক অন্তঃপ্রবাহের কারণে (ডাম্বুর ড্যামে) পানি নিজে থেকে বের হওয়ার ঘটনা দেখা গেছে।”
ওই সময়ে ত্রিপুরায় অতি ভারি বৃষ্টিপাতের তথ্য জানিয়েছিল ভারতের আবহাওয়া অফিস। ২০ অগাস্ট ত্রিপুরার সাব্রুমে একদিনে ৩৭৫.৮ মিলিমিটার বৃষ্টি ঝরে।
অগাস্ট মাসের ২১ দিনে ওই অঞ্চলে স্বাভাবিক বৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল ২১৪ মিলিমিটার, সেখানে বৃষ্টিপাত হয়েছে ৫৩৮.৭ মিলিমিটার; যা স্বাভাবিকের থেকে ১৫১ শতাংশ বেশি।
এই অতি ভারি বৃষ্টির পেছনে যে উড়ন্ত নদীর যোগ দেখতে পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা তা শনাক্ত করা হলো কীভাবে?
উড়ন্ত নদীকে শনাক্ত করতে ইন্টিগ্রেটেড ওয়াটার ভেপার ট্রান্সপোর্ট (আইভিটি) বা বায়ুমণ্ডলে প্রবাহিত জলীয় বাষ্পের পরিমাণ জানতে হয় বলে জানান বুয়েটের গবেষকরা।
তারা এই উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর মিডিয়ান রেইঞ্জ ওয়েদার ফোরকাস্টস (ইসিএমডব্লিউএফ) থেকে। ৩৫ দেশের স্বাধীন এ আন্তঃসরকার সংস্থাটি ১৯৪০ সাল থেকে পরবর্তী সময়ের আবহাওয়ার রোজকার উপাত্ত সরবরাহ করে থাকে।
ড. শম্পা বলেন, “সেখানে এরাফাইভ (ERA5) নামে একটা ডেটা আছে। কিছুটা মেজার ডেটা তারা ব্যবহার করে, আর বেসিক্যালি স্যাটেলাইট তথ্য ব্যবহার করে। প্রতিদিনের ডেটাই তারা আপলোড করে।”
তিনি বলেন, “সেখানকার (ইসিএমডব্লিউএফ) ডেটাগুলো বিশ্লেষণ করে আমরা উড়ন্ত নদীকে শনাক্ত করেছি। ১৮ অগাস্টের উড়ন্ত নদীটি বঙ্গোপসাগর থেকে বাংলাদেশের কক্সবাজারের আরেকটু উপর দিয়ে গিয়ে ত্রিপুরায় হিট করে আবার দিক পরিবর্তন করে আরও উত্তরের দিকে গেছে।”
বাংলাদেশে আকাশ নদী এবারই প্রথম নয়
‘উড়ন্ত নদী’ নিয়ে দেশে তেমন গবেষণা না হওয়ায় অতীতের কতটি ভয়াল বন্যায় তার প্রভাব আছে তা জানা সম্ভব হয়নি।
তবে নিকট অতীতে সিলেট অঞ্চলের আকস্মিক বন্যা বিশ্লেষণ করে গবেষক শম্পা দেখেছেন, ওই অঞ্চলে ২০০০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ২১টি অতি ভারি বৃষ্টির ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে ১৭টিতেই উড়ন্ত নদীর যোগ ছিল।
সেন্টার ফর রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড ইয়ুথ নামের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে ‘রিসার্চ সায়েন্টিস্ট’ হিসেবে কর্মরত আছেন আহমেদ হোসাইন। তিনি বুয়েটের পানি ও বন্যা ইনস্টিটিউটে স্নাতকোত্তর করার সময় ‘বায়ুমণ্ডলীয় নদী’ নিয়ে থিসিস করেছেন। তার গবেষণার এলাকা ছিল সিলেট ও সুনামগঞ্জ।
তিনি বলেন, “অন্য একটি প্রজেক্টে কাজ করতে গিয়ে মনে হল বাংলাদেশের জন্য মেঘালয়ার দিকের বৃষ্টিপাতটা বোঝাটা জরুরি; বন্যাটাকে বোঝার জন্য।”
পরে গবেষণা করতে গিয়ে হোসাইন দেখতে পান, পাশ্চাত্যে উড়ন্ত নদী নিয়ে প্রচুর কাজ হয়েছে, পূর্ব এশিয়াতেও অনেক কাজ রয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে ভারতও এ নিয়ে মনোযোগী হয়েছে।
“তারপর বায়ুমণ্ডলীয় নদী ফেনোমেনাটা বাংলাদেশে আছে-সেটা বের করার চেষ্টা করেছি আমরা। উড়ন্ত নদী তৈরি হওয়ার কারণেই চেরাপুঞ্জিতে অনেক বৃষ্টিপাত হয়। এবং এই প্রচণ্ড বৃষ্টিপাতের কারণে বাংলাদেশে, বিশেষ করে সুনামগঞ্জ অঞ্চলে প্রচুর আকস্মিক বন্যা হয়েছে। অর্থাৎ প্রায় ১০ ঘণ্টা বা একদিনের মধ্যে পানির স্তর অনেক বেড়েছে,” বলছিলেন হোসাইন।
সিলেটের বাসিন্দারা ২০০৪ সালের পর সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েন ২০২২ সালের মাঝামাঝিতে, তাতেও উড়ন্ত নদীর প্রভাব থাকার কথা বলেছেন বুয়েট শিক্ষক শম্পা।
তার ভাষ্য, উড়ন্ত নদী সাধারণত বাংলাদেশে বর্ষা মৌসুমে তৈরি হয়। তবে কিছু কিছু ‘উড়ন্ত নদী’ বর্ষা আসার আগে আগে বা বর্ষার পরে তৈরি হওয়ার ঘটনাও আছে।
এই আকাশ নদী সৃষ্টির পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কতখানি, এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. শম্পা বলেন, “এটা নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে।
“তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভারি বৃষ্টিপাতগুলো বাড়ছে। হয়তবা উড়ন্ত নদী তৈরি হওয়ার যে সম্ভাবনা-এটাও বাড়তে পারে, তবে এটা এখনও নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে সামগ্রিকভাবে দেশে আবহাওয়ার এই নতুন ফেনোমেনাটিকে নিয়ে আলোচনা তেমন নেই।”
উড়ন্ত নদী কীভাবে কাজ করে, তার ব্যাখ্যায় বুয়েট শিক্ষক শম্পা বলেন, “বর্ষাকালে সমুদ্র থেকে প্রচুর পরিমাণে জলীয়বাষ্প উত্তরের দিকে আসে, এটা যখন হিমালয় বা অন্যান্য পাহাড়ে বাধা পায়-তখন বৃষ্টিপাত ঘটায়। উড়ন্ত নদীটা আকাশে তৈরি হয়, সেখানে প্রচুর পরিমাণে জলীয়বাষ্প থাকে।
“আমাজন বা ব্রহ্মপুত্র, যমুনা নদী যে পরিমাণ পানি বহন করে, তার থেকেও বেশি পরিমাণে পানি একটা উড়ন্ত নদীতে থাকতে পারে। অনেক বেশি পরিমাণে জলীয়বাষ্প বহন করার কারণেই আমরা এটাকে নদী বলছি। এটা খুব লম্বা এবং সরু থাকে।”
দেশে দেশে ‘উড়ন্ত নদী’
বাংলাদেশের মতো এবার ভারতও ভয়াবহ বন্যার মুখে পড়েছে। বেশ কয়েকটি রাজ্যে শত শত মানুষের প্রাণহানি হয়েছে, বাস্তুচ্যুত হয়েছে বিপুল সংখ্যক মানুষ।
ভারতের আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ভারত মহাসাগরে উষ্ণায়নের কারণে ‘উড়ন্ত নদী' তৈরি হচ্ছে, যা জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে মৌসুমি বৃষ্টিপাতকে প্রভাবিত করছে।
বিজ্ঞান সাময়িকী নেচারে ২০২৩ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ভারতে ১৯৫১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে বর্ষা মৌসুমে মোট ৫৭৪টি বায়ুমণ্ডলীয় নদীর দেখা মিলেছে; সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ধরনের চরম আবহাওয়ার ঘটনা বেড়েছে।
ভারতে গত দুই দশকে সবচেয়ে তীব্র বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলোর প্রায় ৮০ শতাংশই বন্যা সৃষ্টি করেছে।
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (আইআইটি) এবং ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের একটি দল এই গবেষণার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তারা দেখেছেন যে, ১৯৮৫ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে বর্ষা মৌসুমে ভারতের সবচেয়ে ১০টি মারাত্মক বন্যার সঙ্গে সাতটিরই যোগ আছে বায়ুমণ্ডলীয় নদীর সঙ্গে।
বিবিসি লিখেছে, পৃথিবীর বাতাসে ভাসমান মোট জলীয় বাষ্পের প্রায় ৯০ শতাংশই বহন করে বায়ুমণ্ডলীয় নদী। এই জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বিশ্বের বৃহত্তম নদী আমাজনের স্বাভাবিক পানি প্রবাহের প্রায় দ্বিগুণ।
২০২৩ সালের এপ্রিলে প্রচণ্ড বজ্রপাত, শিলাবৃষ্টি ও বিরল বৃষ্টিপাতের পর ইরাক, ইরান, কুয়েত ও জর্ডান ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে। পরে আবহাওয়াবিদরা দেখতে পান যে, এই অঞ্চলের বাতাস রেকর্ড পরিমাণ আর্দ্রতা বহন করেছে। ২০০৫ সালেও এমন ঘটনা ঘটেছিল, তবে তখন এত আর্দ্রতা ছিল না।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবী দ্রুত উষ্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলো দীর্ঘ, প্রশস্ত ও তীব্রতর হয়ে উঠছে; যা বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষকে বন্যার ঝুঁকিতে ফেলেছে।
আমেরিকান জিওফিজিক্যাল ইউনিয়ন প্রকাশিত ২০২১ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বর্ষা মৌসুমের শুরুতে (মার্চ-এপ্রিল) পূর্ব চীন, কোরিয়া ও পশ্চিম জাপানে ঝরা ভারি বৃষ্টির ৮০ শতাংশের সঙ্গে বায়ুমণ্ডলীয় নদীর সম্পর্ক আছে।
জার্মানির পটসড্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সারা এম ভালেজো-বার্নাল বলেন, ১৯৪০ সাল থেকে পূর্ব এশিয়ায় বায়ুমণ্ডলীয় নদীর তীব্রতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
“আমরা দেখেছি যে, তখন থেকে মাদাগাস্কার, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানে এই নদী আরও তীব্র হয়ে উঠেছে।”
কতটা প্রস্তুত বাংলাদেশ?
গবেষণা করতে গিয়ে ‘সাহিত্য পর্যালোচনার’ জন্যও ‘উড়ন্ত নদী’ বিষয়ে কোনো কাজ খুঁজে না পাওয়ার কথা বলছেন বুয়েটের বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক শম্পা।
তার ভাষ্যে, “দেশে এই বিষয় নিয়ে গবেষণার অভাব রয়েছে। এখানে মুনসুন খুবই অ্যাক্টিভ, যার ফলে নিম্নচাপ বা সাইক্লোনের সঙ্গে উড়ন্ত নদীকে আলাদা করা যায় না। ধরে নেওয়া হয়, হয়তো সাইক্লোনের জন্যই এই বৃষ্টিপাত হচ্ছে। কিন্তু এখানে আসলে উড়ন্ত নদী তৈরি হয়।
“একটা সাইক্লোন হিট করছে উড়িষ্যাতে, ওই সময় বাংলাদেশেও বৃষ্টিপাত হচ্ছে। কিন্তু এখানে আসলে বৃষ্টিটা হচ্ছে উড়ন্ত নদীর কারণে। এ ধরনের ঘটনা দেখা যায়।”
উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এবার বন্যায় অন্তত ৭৪ জনের প্রাণহানি হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অর্ধকোটির বেশি মানুষ। ফেনী, কুমিল্লা ও নোয়াখালীতেই ৫৬ হাজার ৩৪৯টি গরু-মহিষ ও ছাগল-ভেড়ার মৃত্যু হয়েছে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে ‘উড়ন্ত নদীর’ বিষয়টি নিয়ে আনা গেলে এ ধরনের ক্ষতির পরিমাণ অনেকাংশে কমানো যেত বলে মনে করেন গবেষক ড. শম্পা।
তিনি বলছেন, “বাংলাদেশে উড়ন্ত নদী তৈরি হওয়ার একদিন বা দুই দিন পরে বেশি বৃষ্টি হয়, কখনও কখনও যেদিন তৈরি হয়, সেদিনই অত্যাধিক বৃষ্টি হয়।
“আবহাওয়া অধিদপ্তর বঙ্গোপসাগর এবং হিমালয় অঞ্চলের কোথাও উড়ন্ত নদী তৈরি হচ্ছে কি না এবং এর গতিবিধি কোনদিকে এটা শনাক্তের কাজ করতে পারে। এরপর মানুষকে অ্যালার্ট করা হলে ক্ষয়ক্ষতিটা কিছুটা হলেও হয়ত কমানো যাবে। আমাদের এখানে বন্যার ক্ষয়ক্ষতি রোধের জন্য এ তথ্যটা খুবই জরুরি।”
দেশের আবহাওয়া বা বন্যার পূর্বাভাসে যাতে বিষয়টি স্থান পায়, সেজন্য এখন থেকেই কাজ করার তাগিদ দিয়েছেন ড. শম্পা।
তিনি বলেন, বাস্তবতার নিরিখে পূর্বাভাসে এখন উড়ন্ত নদীর তথ্য দেওয়া জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
“কেননা উড়ন্ত নদী বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয়বাষ্প নিয়ে এসে সিলেট বা কোথাও বৃষ্টিপাত ঘটাচ্ছে, এটা যখন বঙ্গোপসাগরে তৈরি হচ্ছে-তখন যদি শনাক্ত করা সম্ভব হয়, সেক্ষেত্রে সচেতনতা তৈরি করা যাবে।”
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের টার্গেট হচ্ছে বন্যা; আকস্মিক বন্যা কোন সিস্টেমের কারণে তৈরি হয়; কোন কারণে ভারি বৃষ্টি হয়, সেগুলো নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করে বন্যার পূর্বাভাসটাকে আরও উন্নত করার চেষ্টা করব।”
তবে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, উড়ন্ত নদীকে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে নিয়ে আসাটা খুব কঠিন।
“উড়ন্ত নদীতে বিস্তৃর্ণ এলাকায় বৃষ্টি হয়। আর এখানে বৃষ্টি হচ্ছে অল্প জায়গায়, ফেনী আর আশেপাশের এলাকায়; ফেনীতে বৃষ্টি হওয়ার সময় ঢাকায় বৃষ্টি হইছে? একটা পার্টিকুলার পয়েন্টে যখন বৃষ্টি হয়, আর হঠাৎ করে বেশি বৃষ্টি হয়ে যায়, এটা বলা ঠিক হবে না যে-উড়ন্ত নদীর কারণে বৃষ্টি হইছে। শীতপ্রধান দেশের ওয়েদারের প্রভাব যদি আমাদের এখানে অ্যাপ্লাই করেন, ওই মডেল কাজ করবে না।”
জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটা (উড়ন্ত নদীর বিষয়ে) আমার জানা নেই, আপনার কাছে প্রথম শুনলাম। আমি এরকম বিষয়ে খোঁজখবর নেব, তারপর কাজের উদ্যোগ নেব।”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/ ওয়াইএফ-০২