92
Sharesদেশে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় অনেক মানুষ হতাহত হচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তি ও নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে থাকে সরকার। তবে এ জন্য ভুক্তভোগীকে আবেদন করতে হয় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও পরিবারকে সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটনের ৩০ দিনের মধ্যে আবেদন করতে হয়।
যেভাবে সংগ্রহ করা যাবে আবেদনপত্র: বিআরটিএ’র ওয়েবসাইট (brta.gov.bd) থেকে আবেদনপত্রটি সংগ্রহ করতে পারবেন যে কেউ। ওয়েবসাইটের নিচের দিকে ‘ট্রাস্টি বোর্ড সংক্রান্ত’ ক্যাটাগরির নিচে ‘আবেদন ফরম’ এ ক্লিক করলে ‘দুর্ঘটনা ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত আর্থিক সহায়তা তহবিল হইতে আর্থিক সহায়তা প্রাপ্তির আবেদন’ এর একটি ফরম (৩২) চলে আসবে। এটি ডাউনলোড করে প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করে জমা দিতে হবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে।
দুর্ঘটনা তহবিল: সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ অনুযায়ী, এই দুর্ঘটনা তহবিল গঠন করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএ। সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮-এর ৫৪(১) উপধারা অনুযায়ী সরকার ২০২১ সালের ১০ অক্টোবর ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ ও সড়ক পরিবহন বিধিমালা-২০২২ এর আলোকে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়া শুরু হয় ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি। বিআরটিএর তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ হাজার ২৪ নিহত হন; আহতের সংখ্যা ছিল ৭ হাজার ৪৯৫। অন্যদিকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ৪ হাজার ১৫৩ জনের। আহতের সংখ্যা ৫ হাজার ১২৬। সব মিলিয়ে ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা ২১ হাজার ৭৯৮। যদিও একই সময়ে মাত্র ৫৬৬ জনকে আর্থিক সহায়তা তহবিল থেকে ক্ষতিপূরণ দিয়েছে বিআরটিএ। ক্ষতিপূরণ পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৪৮৩ জন নিহত ব্যক্তির উত্তরসূরি। ৮৩ জন ছিলেন আহত ব্যক্তি। তাদের অনুকূলে সব মিলিয়ে ২৫ কোটি ২৯ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করা হয়েছে।
বিআরটিএর তথ্য বলছে, ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের পর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন জমা পড়ে ১ হাজার ৯৪০টি। এর মধ্যে ১ হাজার ৮৩৫টি আবেদন স্থায়ী অনুসন্ধানের জন্য কমিটির কাছে পাঠানো হয়। ৬৫৪টি আবেদন স্থায়ী অনুসন্ধান কমিটির কাছ থেকে পেয়েছে বিআরটিএ। এর বিপরীতে ৫৬৬টি চেক হস্তান্তর করা হয়েছে।
এ সম্পর্কে ক্ষতিপূরণ তহবিল দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিআরটিএর পরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ক্ষতিপূরণ দেওয়া শুরু হয়। তহবিলে যে পরিমাণ অর্থ জমা আছে, ক্ষতিপূরণ বিতরণ তার চেয়ে কম হওয়ার প্রধান কারণ হলো, ৩০ দিনের সময়সীমা। বিধিতে বলা আছে, দুর্ঘটনার ৩০ দিনের মধ্যে আবেদন করতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুর্ঘটনায় নিহতের স্বজন শোকগ্রস্ত থাকার কারণে এ সময়ের মধ্যে আবেদন করতে পারেন না। এজন্য আমরা বিধিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছি।
সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য তহবিলে যে পরিমাণ অর্থ জমা রয়েছে, তার বিপরীতে প্রদান করা ক্ষতিপূরণের পরিমাণ অনেক কম। বিষয়টি স্বীকার করেছেন বিআরটিএর কর্মকর্তারাও। সড়ক দুর্ঘটনায় সরকার ক্ষতিপূরণ দেওয়া শুরু করলেও তা এখনো সাধারণ মানুষের কাছে সেভাবে পৌঁছাতে পারেনি বলে মনে করেন বিআরটিএর চেয়ারম্যান মো. ইয়াসীন। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমলে নিয়ে আমরা প্রচার-প্রচারণায় গুরুত্ব দিচ্ছি। ক্ষতিপূরণ প্রদানের পরিসর বাড়াতে যা যা করা দরকার, সবই আমরা করব।’
ক্ষতিপূরণ দেয়ার ক্ষেত্রে ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে হিসাব ধরা হয়। ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারির আগে যারা হতাহত হয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ বিবেচ্য হবে না। পরিবহন বিধিমালা ২০২২ অনুযায়ী দুর্ঘটনায় হতাহতদের আর্থিক সহায়তার পরিমাণ নির্ধারণ করবে ট্রাস্টি বোর্ড। দুর্ঘটনায় নিহত বা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে কারও মৃত্যু হলে আর্থিক সহায়তার পরিমাণ হবে এককালীন অন্যূন ৫ লাখ টাকা। দুর্ঘটনাকবলিত ব্যক্তির গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গহানি হলে আর্থিক সহায়তার পরিমাণ হবে অন্যূন ৩ লাখ টাকা। গুরুতর আহত এবং চিকিৎসার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সম্ভাবনা না থাকলে আর্থিক সহায়তার পরিমাণ হবে অন্যূন ৩ লাখ টাকা। গুরুতর আহত এবং চিকিৎসার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকলে আর্থিক সহায়তার পরিমাণ হবে অন্যূন ১ লাখ টাকা। ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য দুর্ঘটনা ঘটার ৩০ দিনের মধ্যে নির্ধারিত ফরমে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করতে হবে।
ওয়াইএফ/০১