মতামত



ডেস্ক রিপোর্ট

জুন / ০৪ / ২০২২


suicide

সিলেটে কেন বাড়ছে আত্মহত্যা?


431

Shares

আত্মহত্যা যেন পিছু ছাড়ছে না সিলেটের মানুষজনের। আগের সপ্তাহেই টানা তিন দিনে সিলেটে তিনটি আত্মহত্যা সংগঠিত হয়। এরপর আবারও গত রোববার রাতে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ভাদেশ্বর ইউনিয়নে আয়েশা সিদ্দিকা (১৫) নামের নবম শ্রেণীর এক ছাত্রী আত্মহত্যা করে।

এদিকে গত সোমবার সিলেট সদর উপজেলার জালালাবাদ থানার মইয়ারচর গ্রামের নাইম উদ্দিনের স্ত্রী নাজমিন আক্তার (২০) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। মঙ্গলবার পুলিশ জানায়, সোমবার বিকালে নাজমিন আক্তার বাড়ির বাথরুমে তোয়ালে রাখার হেংগারের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, নানা কারণে হতাশা, একাকিত্ব মানুষকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আত্মহত্যা একটি মানসিক সমস্যা। যারা আত্মহত্যা করে তাদের মধ্যে ৯০ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো মানসিক অসুস্থতায় ভুগেন। কিন্তু মানুষজন শারীরিক সমস্যা নিয়ে যতটা চিন্তিত হন, ততটা মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত হন না।

মানসিক প্রতিবন্ধকতার জন্য ডাক্তারের স্মরনাপন্ন হন না বেশিরভাগ মানুষ। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে উদাসিনতার কারণে আত্মহত্যার প্রবণতা দিনদিন বাড়ছে। সিলেট জেলা পুলিশের তথ্য অনুযায়ি, ২০১৮ থেকে ২০২১ পর্যন্ত সিলেট জেলায় আত্মহত্যা করেছে ৩৯৬ জন। এরমধ্যে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন ৩১৫ জন।

বিষপানে আত্মহত্যা করেছে ৭৯জন ও গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন ২ জন। সিলেট জেলায় ২০২০ সালে ৯৩টি, ২০২১ সালে ৯৯টি ও ২০২২ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত ৩০টি আত্মহত্যা সংগঠিত হয়েছে। সিলেট ইবনে সিনা হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জান্নাতুন নাহার তানিয়া বলেন, আমরা শারীরিক সমস্যা নিয়ে যতটা চিন্তিত ততটা মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত নই।

যেমন আমাদের সর্দি জ্বর হলে ডাক্তারের স্মরনাপন্ন হই। কিন্তু মানসিক অশান্তিতে যখন ভোগী তখন ডাক্তারের কাছে যাই না। আমাদের একটা সোশ্যাল স্টিগমা আছে যে কোনো সাইকোলজিস্টের কাছে গেলেই মনে হয় আমরা পাগল হয়ে গেলাম। আবার অনেকেই মনে করেন একবারে পাগল হওয়ার আগ পর্যন্ত মানসিক ডাক্তারের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।

তিনি বলেন, মানসিক প্রতিবন্ধকতার জন্য যে আমরা কোনো ডাক্তারের কাছে যাব এই প্র্যাকটিস আমাদের সমাজে নেই। এর ফলে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়াচ্ছে। আমার মনে হয় আমরা যদি মানসিক ভাবে কোনো বিষয় নিয়ে বিষন্ন থাকি তাহলে পরিবারের অন্য কোনো সদস্যকে বলে যদি না পারি তাহলে অবশ্যই একজন সাইকোলজিস্টের শরনাপন্ন হই। তাহলে এই আত্মহত্যা করার প্রবণতা কমবে।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট ফজিলাতুন্নেছা বলেন, করোনার পর সারা বিশ্বে আত্মহত্যার চেষ্টা ও আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর কারন হল গত ২ বছরে মানুষের জীবনে অনেক পরিবর্তন এসেছে। একাকিত্ম, অর্থনৈতিক সংকট বেড়েছে। পাশাপাশি করোনাকালে ছেলে মেয়েরা র্দীঘ সময় বাসায় ছিল তখন বাবা মায়ের সাথে তাদের নানা ধরনের তর্ক বিতর্ক হচ্ছে।

তিনি বলেন, করোনাকালীন সময়ে সাংসারিক সংঘাত বেড়ে গেছে। এই বিশেষ বিশেষ কতগুলো কারণে মানুষ মানসিক ভাবে চাপের মধ্যে আছে। সেখান থেকে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে গেছে। ভয়, দারিদ্রতা, পারিবারিক সংঘর্ষের কারণে মানসিক অসুস্থাও বেড়ে গেছে।

মানসিক সমস্যা ও মানসিক অসুস্থা এক নয়। মানসিক অসুস্থতাও আত্মহত্যার জন্য দায়ী। কারণ যাদের ডিপ্রেশন আছে তারা সবাই আত্মহত্যা করেন না। কিন্তু যারা আত্মহত্যা করে তাদের মধ্যে ৯০ শতাংস মানুষ কোনো না কোনো মানসিক অসুস্থতায় ভুগছিল।

তাই মানসিক সাস্থ্য নিয়ে সবার সচেতন হওয়া প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, আমাদের সোসাইটিতে একটা ট্যাবু আছে যে মানসিক অসুস্থা নিয়ে ডাক্তাররে কাছে যাবো না, কাউকে কিছু বলবো না। আমাদের সমাজে মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টা খুব অবহেলিত। আত্মহত্যার প্রবনতা কমানোর প্রধান এবং অন্যতম স্বর্ত হচ্ছে সব সেক্টরের মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা।

এক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অন্যন্য বিষয়ের যেমন শিক্ষক আছে তেমন শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশের জন্য একজন করে সাইকোলজিস্ট নিয়োগ দিলে ভাল ফলাফল আসতে পারে। বিদেশে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাইকোলজিস্ট থাকা বাধ্যতামূলক হলেও আমাদের দেশে এটা নেই। কিছু কিছু বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সাইকোলজিস্ট নিয়োগ দিয়েছেনে।

কিন্তু সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এরকম কোনো পদ না থাকায় দায়িত্বরত কেউ থাকেন না। তবে এখন যদি আমরা মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ না করি তবে ভবিষত্যে এই আত্মহত্যা প্রবনতা ব্যপক আকার ধারন করবে।

মতামত