44
Sharesশেখ বশির উদ্দিনকে বাণিজ্য উপদেষ্টা করার বিষয়ে প্রশ্ন রেখে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেছেন, ‘তাকে বলেন রমজানের আগে নিত্যপণ্যের দাম কমাতে, না হলে উপদেষ্টার পদ থেকে বরখাস্ত করা হবে।’ জামায়াতকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘বিএনপির বিরুদ্ধে এত কথা কেন বলেন? সহযোগিতা নিলে সেটা হয় চাঁদা আর আপনারা নিলে হাদিয়া? শব্দগত পার্থক্য দিয়ে যেটা বুঝাতে চান মানুষ তা বুঝে।’ সমন্বয়কদের দল গঠনকে স্বাগত জানাবেন জানিয়ে পাশাপাশি সতর্ক করে বলেন, ‘কুড়াল দিয়ে সেইভ করা যায় না, চুল কাটা যায় না, গাছ কাটা যায়। সুতরাং কুড়াল দিয়ে সেভ করার চেষ্টা কইরেন না।’
জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সিলেটের ঐতিহ্যবাহী রেজিস্টারী মাঠে সিলেট জেলা বিএনপির আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরীর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদীর লুনা, খন্দকার আব্দুল মোক্তাদির, সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপি চেয়ার পারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ) জিকে গৌছ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলন, মিফতাহ সিদ্দিকী প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেছেন, ‘বর্তমান সরকার এমন একটি সরকার, দলমত নির্বিশেষে সকলে-ফ্যাসিস্ট সরকার এবং তার দুসররা ব্যাতিত আর সবাই তাকে সমর্থন দিয়েছে। সেই সমর্থিত রাজনৈতিক সরকার বা অন্যন্য একটি সরকার হচ্ছে এই সরকার। এতো রাজনৈতিক সমর্থন থাকার পরও এই সরকার জনগণের সবচেয়ে বড় যে সমস্যা দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, সেটা দূর করতে পারেনি।’ এরপর তিনি সরকারের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘যদি না-ই পারেন তাহলে আপনাদের কাছে প্রশ্ন আকিজ গ্রুপের বশিরকে কেন আপনারা উপদেষ্টা পরিষদে নিয়েছেন। কেন তাকে বাণিজ্য উপদেষ্টা করেছেন? তাকে বলেন, রমজানের আগে দাম কমাতে হবে। না হলে উপদেষ্টা পদ থেকে তোমাকে বরখাস্ত করা হবে।’
আকিজ গ্রুপের মালিকরা আওয়ামী লীগের এমপি হয়েছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই এক্ষেত্রে ভালো কিছু করে দেখাতে হবে, না হলে কী প্রয়োজন তার এখানে?’
তেলের বাজার কারা নিয়ন্ত্রণ করা করে জানা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কয়েকটি গ্রুপ আছে-গাজী গ্রুপ, রাজি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, ফ্রেশ গ্রুপ এবং টিকে গ্রুপ। এই গ্রুপগুলোকে একত্র করতে বাণিজ্য উপদেষ্টা দায়িত্ব নিতে পারেন। কারণ একই সঙ্গে তিনি আকিজ গ্রুপের মালিকও বটে। তিনি দায়িত্ব নিলে সয়াবিন তেল বাজারে থাকবে না-এটা কেউ বিশ^াস করে না। তিনি দায়িত্ব নিলে ডালের দাম, ডিমের দাম, অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম কমবে না এটা কেউ বিশ^াস করে না। এজন্য আন্তরিকতা থাকতে হবে। আন্তরিকতা যদি না থাকে তাহলে ময়ূর সিংহাসনে বসানোর দায়িত্ব বাংলাদেশের মানুষ নেয়নি। ভবিষ্যতেও নেবে না।’
শেখ হাসিনা পরিবার লীগের সভানেত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন মন্তব্য করে এসময় তিনি বলেন, ‘পালতক, পতিত সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের নেত্রী ছিলেন না। শেখ হাসিনা তার পরিবারের নেত্রী। যদি পরিবারের নেত্রী না হয়ে থাকেন তাহলে তার পরিবারের কেউ কেন গ্রেপ্তার হলো না? তারা কেন আগেই সরে গেল বাংলাদেশ থেকে। কেন তাপস চলে গেল, কেন শেখ হেলাল, শেখ সেলিম চলে গেল, কেন তার ভাই হাসনাত আব্দুল্লাহ, তার ভাইয়ের ছেলে সাদিক আব্দুল্লাহ চলে গেল? কিভাবে চলে গেল? সুতরাং তিনি পরিবার লীগের সভানেত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারেননি।’
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আপা আপা না করে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা তার আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে পালিয়ে গেছেন। আর তোপের মুখে রেখে গেছেন দলের নেতাকর্মীদের। এজন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বলব- আপনারা কোন লজ্জায় বা কত নির্লজ্জ বলে সেই নেত্রীর দল করতে চান?’ তিনি আরো বলেন, ‘আপনারা জনগণের মধ্যে আসেন। তওবা করেন, অনুশোচনা করেন। জাতীর সামনে ক্ষমা চান। বলেন, আমরা অন্যায় করেছি, অপরাধ করেছি আমাদের ক্ষমা করেন। তাহলে হয়তো কাজ হবে। এর আগে আপা, আপা, আপা বললে কাজ হবে না। আপা আপা বললে কাঁপাকাপি বন্ধ হবে না।’
সিলেটের নেতা ইলিয়াস আলীকে স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘মনে রাখতে হবে প্রত্যেকটা হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে। ইলিয়াস আলী, ইলিয়াস আলীর ড্রাইভার, জুনেদ, দিনারসহ অন্যান্য যারা আছেন, গুম হওয়াদের অসংখ্য মা-বোন যারা আছেন তাদের চোখের পানি না মোছা পর্যন্ত পতিত স্বৈরাচারকে কোনো মঞ্চে বাংলাদেশের মানুষ দেখতে চায় না।’ এসময় সিলেট-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ড. এ কে আব্দুল মোমেনকে লক্ষ্য করে তিনি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমাদের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক-এইটা বলা আপনাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন সাহেব কোথায় আছেন? স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক এখন কোথায় বিরাজ করতে তা আমরা দেখতে চাচ্ছি।’
জামায়াতে ইসলামকে উদ্দেশ্য করে নাম না নিয়ে তিনি বলেন, ‘একটি দল আছে, লাফ দিয়ে দিয়ে কোল বদল করেন। কিছুদিন বিএনপির কোলে থাকেন, তারপর ভালো লাগে না। লাফ দিয়ে গিয়ে আওয়ামী লীগের কোলে উঠেন। আবার কিছুদিন পর ভালো লাগে না। ১৯৮৬ সালে লাফ দিয়ে জাতীয় পার্টির কোলে উঠেছিলেন। বার বার এই কোল বদল করা দল দয়া করে একটা কোলে স্থির হন। এক জায়গায় থামেন। থামলে পরে মানুষ চিন্তা করবে-এরা কোনদিকে যাবেন এটা বুঝা যাচ্ছে। এত বারবার যদি কোলবালিশের মতো কোল বদল করেন তাহলে যা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন সেটা হবে না। ব্যর্থ হবেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা আন্দোলন করেছি যুগপৎভাবে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। আপনাদের ত্যাগ, তিতীক্ষা, আন্দোলনের প্রতি আমাদের সম্মান আছে। জোটবদ্ধভাবে করিনি কিন্তু যুগপৎভাবেও আন্দোলন করিনি, একত্রিতভাবে আন্দোলন করেছি। আজকে কেন ঘৃণার বিষবাষ্প ছড়াচ্ছেন।’
তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘বিএনপির বিরুদ্ধে এত কথা বলছেন কেন? কেউ যদি কোথাও থেকে সাহায্য সহযোগিতা নেয় সেটা হয়ে যায় চাঁদা। আর আপনারা নিলে হয় হাদিয়া? হাদিয়া আর চাঁদার শব্দগত পার্থক্যের মাধ্যমে যেটা বুঝাতে চাচ্ছেন সাধারণ মানুষ এটা বুঝে। সুতরাং রাজনীতির এই খেলা বন্ধ করতে হবে।’ এই দেশে যাতে আর কোনো ফ্যাসিস্ট মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে সেটাই এখন লক্ষ্য হওয়া উচিত বলে এসময় তিনি মন্তব্য করেন।
ছাত্র সমন্বয়কদের অবদানের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘ছোট ভাইরা তোমাদের বলব, আপনাদের ত্যাগ, আপনাদের জুলাই-আগস্টের বিপ্লব, আমরা যে স্রোতধারা তৈরি করেছিলাম সেই স্রোতধারার সঙ্গে আপনাদের শক্তি মিলিত হয়ে একটা মোহনায় পরিণত হয়েছে। এবং সেই স্রোত সমুদ্রে মিলিত হয়েছে বলেই স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। না হলে সম্ভব হতো না, আমরাও বিশ্বাস করি। কিন্তু আমরা কৃতিত্ব নিতে চাই না। কৃতিত্বের ভাগ আপনাদের দিয়ে দিতে রাজি আছি।’
পরবর্তী প্রজন্মের নেতৃত্ব তো আপনাদের বয়সীদের হাতেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সুতরাং কাউকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা, কথায় কথায় সমালোচনা করা, কিছু হলেই বিএনপির ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা বন্ধ করতে হবে।’
এসময় তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘কুড়াল দিয়ে কিন্তু সেইভ করা যায় না, চুল কাটা যায় না, গাছ কাটা যায়। সেভ করতে হলে ব্লেড লাগবে, চুল কাটতে কাঁচি লাগবে। সুতরাং কুড়াল দিয়ে সেভ করার চেষ্টা কইরেন না। ব্যর্থ হবেন, শান্তিটা নষ্ট হয়ে যাবে।’