203
Sharesসিলেট ২৫০ শয্যার সদর হাসপাতাল নির্মাণকাজ ৯৭ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দাবি, অক্টোবরেই গণপূর্ত বিভাগের কাছে ভবনটি হস্তান্তর করা হবে। তবে ভবন নির্মাণকাজ শেষ হলেও যথাসময়ে হাসপাতাল চালু নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
হাসপাতালটি সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিচালনা করবে না স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পরিচালনা করবে, তা এখনো নির্ধারণ হয়নি। জনবল নিয়োগ বা লজিস্টিক সাপোর্ট কোথা থেকে আসবে, কে তদারক করবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্তারা নিজেরাই জানেন না।
জানা যায়, প্রায় ৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর চৌহাট্টায় শহীদ শামছুদ্দিন হাসপাতালের পাশে আগের আবুসিনা ছাত্রাবাসের স্থানে সিলেট জেলা হাসপাতাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তবে আবুসিনা ছাত্রাবাস প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন উল্লেখ করে হাসপাতাল নির্মাণের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন সিলেটের সংস্কৃতিকর্মীরা।
এতে কাজ শুরু হতে কিছুটা বিলম্ব হয়। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ৬ দশমিক ৯৮ একর জায়গার ওপর হাসপাতাল নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হাসপাতালটির অবকাঠামো নির্মাণের দায়িত্ব পায় পদ্মা অ্যাসোসিয়েশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং।
২০২০ সালের জানুয়ারিতে কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। হাসপাতাল নির্মাণকাজের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগের পরিচালক ডা. শরীফুল হাসান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সাধারণত একজন তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ করে হাসপাতালটি পরিচালনা বা তদারকি করার কথা।
কিন্তু এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা আসেনি।’ সিলেট গণপূর্ত বিভাগ সূত্র জানায়, ভিত্তিসহ আটতলা ভবন নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে। এখন রঙের কাজ চলছে। লিফট স্থাপন হবে। কিছু গ্লাস বিদেশ থেকে আসবে। সেটার অপেক্ষা করা হচ্ছে।
ভবনটিতে থাকবে কার পার্কিং, প্রথম তলায় টিকিট কাউন্টার, ওয়েটিং রুমসহ প্রয়োজনীয় কক্ষ, দ্বিতীয় তলায় আউটডোর, রিপোর্ট ডেলিভারি ও কনসালট্যান্ট চেম্বার, তৃতীয় তলায় ডায়াগনস্টিক, চতুর্থ তলায় কার্ডিয়াক ও জেনারেল ওটি, আইসিসিইউ, সিসিইউি, পঞ্চম তলায় থাকবে গাইনি বিভাগ, অবথালমোলজি, অর্থপেডিক্স ও ইএনটি বিভাগ, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম তলায় ওয়ার্ড ও কেবিন। এর মধ্যে আইসিইউ বেড ১৯টি এবং সিসিইউ বেড নয়টি এবং ৪০টি কেবিন থাকবে। ভবনের বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ৯০০-১০০০ কেভি ক্ষমতার একটি ট্রান্সফরমার বসানোর কথা রয়েছে।
সিলেট গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রিপন কুমার রায় বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বিদ্যুৎ সাবস্টেশন নির্মাণকাজ এখনো বাকি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভবন হস্তান্তর করলেও বাকি কাজ চলবে। এছাড়া ভবনটিতে জরুরি প্রয়োজনের জন্য থাকবে ৩০০ কেভি অটোডিজেল জেনারেটর।
হাসপাতালটি ২৫০ শয্যার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে।’ এদিকে, শুরুতেই হাসপাতাল নির্মাণ ও তদারকিতে সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে গণপূর্ত বিভাগ সমন্বয় করেনি বলে অভিযোগ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়।
তৎকালীন পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় জানিয়েছিলেন, হাসপাতালের অগ্রগতি বিষয়ে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। তিনি নিজ দায়িত্বে কয়েকবার পরিদর্শন করেছেন। মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন, যাতে হাসপাতাল নির্মাণকাজের বিষয়টি তারা দেখে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে পারেন।
বর্তমান পরিচালক ডা. শরীফুল হাসান একই তথ্য দিয়েছেন। তবে সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. মনসির চৌধুরী দেন অন্য তথ্য। তার দাবি, সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের পাশেই নির্মাণ করা হয়েছে আটতলা ভবন। শামসুদ্দিন হাসপাতালটি পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ওই হাসপাতালের পরিচালকই নতুন হাসপাতাল পরিচালনা করবেন।
শামসুদ্দিন হাসপাতালের রোগীদেরই ওই ভবনে স্থানান্তর করা হবে। আর বর্তমান শামসুদ্দিন হাসপাতালকে বিশেষায়িত শিশু হাসপাতালে রূপ দেয়ার কথা রয়েছে। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ‘আটতলার যে হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে, সেটা দেখভাল করা তার দায়িত্বে পড়ে না।
সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালকের সেটি দেখভাল করার কথা।’ একটি সূত্র জানায়, এর আগে হাসপাতাল নির্মাণের স্থাপত্য নকশা, কর্মপরিকল্পনা, সেবা প্রদানের জন্য সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনায় কক্ষের সুবিন্যাসকরণ ইত্যাদি বিষয় স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীলদের মধ্যে সিভিল সার্জন, বিভাগীয় পরিচালক অথবা ওসমানী হাসপাতালে পরিচালকের কাছে কোনো কাগজপত্র দাখিল করা হয়নি উল্লেখ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছিল সিলেট স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালকের কার্যালয়।
তবে সিলেট গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রিপন কুমার রায় দাবি করেন, সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগ যে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ করছে তা সঠিক নয়। টেন্ডার শিডিউল, নকশাসহ কাগজপত্র সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগকে দেয়া হয়েছে।
প্রতি তলায় ছাদ ঢালাইয়ের সময় তাদের জানানো হয়েছে এবং তারা এসেছিলেন। তিনি বলেন, ‘সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগকে একজন কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়ার জন্য বলা হয়েছিল, যাতে দেয়াল, কক্ষ বা ভবনের কোথাও সমস্যা বা প্রয়োজনীয়তা থাকলে আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারি।
কিন্তু তারা কোনো লোক দেননি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আগামী অক্টোবরে ভবন হস্তান্তর করলেই সিলেট বিভাগের স্বাস্থ্য পরিচালকের কাছে তারা হস্তান্তর করবেন।’