সিলেট প্রতিক্ষণ



নিজস্ব প্রতিবেদক

অক্টোবর / ১০ / ২০২৪


মান্নান মুক্ত, মানিক কারাগারে


72

Shares


জামিন লাভের একদিন পর মুক্তি পেয়েছেন সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান আর সাবেক সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিককে গ্রেপ্তারের দুই দিন পর আজ কারাগারে পাঠানো হয়েছে ।

আজ বৃহস্পতিবার কারাবন্দি হিসেবে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মান্নান সেখান থেকে মুক্তি পেয়েছেন । গতকাল বুধবার সুনামগঞ্জের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. হেমায়েত উদ্দিন এম এ মান্নানের জামিন মঞ্জুর করেন। আর মুহিবুর রহমান মানিককে গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র‍‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍‍্যাব)। আজ বৃহস্পতিবার আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। দুজনই একই মামলার এজাহারভূক্ত আসামি। 

সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে জেলার মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, 'সুনামগঞ্জ কারাগার থেকে সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রীর জামিনের কাগজপত্র পেয়ে আমরা সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি। ওসমানী হাসপাতাল থেকেই সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রীকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।'  

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী বলেন , 'বুকে ব্যথা ও অন্যান্য শারীরিক জটিলতার জন্য সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার তাকে ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলেন । পরীক্ষা নিরীক্ষা করে আমরা তাকে কেবিনে ভর্তি করি। মেডিকেল বোর্ড গঠন করে তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। কারা কর্তৃপক্ষের লিখিত চিঠি আমরা পেয়েছি। তিনি এখন আর বন্দি নন। হাসপাতাল থেকে তিনি স্ব ইচ্ছায় রিলিজ নিয়েছেন।'

এদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের ওপর  হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় গ্রেপ্তার সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিককে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার মামলায় তাকে আদালতে তোলা হলে সংশ্লিষ্ট দ্রুত বিচার আদালতের বিচারক না থাকায় তাকে কারাগারে প্রেরণ করেন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্টেট মোহাম্মদ আলমগীর।

মুহিবুর রহমান মানিকের আইনজীবী আব্দুল হামিদ জানান,' দ্রুত বিচার আদালতের বিচারক না থাকায় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্টেট আদালতের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্টেট মোহাম্মদ আলমগীর তাকে সুনামগঞ্জ জেলা কারাগারে প্রেরণ করেছেন। আমরা তার শারীরিক অসুস্থতার কাগজপত্র আদালতে উপস্থাপন করলে আদালত কার বিধি অনুযায়ী তাকে চিকিৎসা প্রদানের আদেশ দিয়েছেন। ১৫ অক্টোবর এই মামলার শুনানির তারিখ ধার্য্য করেছেন আদালত। '

গত ৪ আগস্ট সুনামগঞ্জ শহরে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায়  ৯৯ জনের নাম উল্লেখ করে  সুনামগঞ্জের দ্রুত বিচার আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয় । এই মামলায় দুই  নাম্বার আসামি সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান ও তিন নাম্বার আসামি সুনামগঞ্জ ৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মুহিবুর রহমান মানিক। প্রধান আসামি সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নূরুল হুদা মুকুট। 

গত ২ সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জের আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রত বিচার) আদালতে  মামলাটি দায়ের করেন জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলা এরোয়াখাই গ্রামের বাসিন্দা মো. হাফিজ আহমদ । 

মামলার এজাহারে বাদী নিজেকে গত ৪ আগস্ট  সুনামগঞ্জ পৌর শহরে সংঘর্ষের ঘটনায় আহত শিক্ষার্থী জহুর আলীর বড় ভাই হিসেবে উল্লেখ করেন। আদালতের বিচারক নির্জন কুমার মিত্র মামলাটি এজাহার হিসাবে নথিভূক্ত করার জন্য সুনামগঞ্জ  সদর মডেল থানাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন।

সুনামগঞ্জ ৩ ( জগন্নাথপুর - শান্তিগঞ্জ) আসনের চারবারের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ মান্নানকে গত ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে সুনামগঞ্জের  শান্তিগঞ্জ এলাকার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন তাকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে  শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় দায়ের করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এর পর থেকে তিনি সুনামগঞ্জ জেলা কারাগারে ছিলেন। গত শনিবার বিকেলে তাকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।  গত রবিবার সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের দ্বিতীয় দফা জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন  সুনামগঞ্জের দ্রুত বিচার আদালত। এর আগে ২৩ সেপ্টেম্বর আরেকবার তার জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করা হয়েছিল।

সুনামগঞ্জ জেলা কারাগারে থাকা অবস্থায় শনিবার সকালে তিনি অসুস্থবোধ করলে তাকে সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে তাকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। পরে সিলেট কারা হাসপাতালের তত্ত্বাবধানে ডিভিশনে রেখে তার চিকিৎসা চলছিল। মঙ্গলবার তাকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।

সাবেক যুগ্ম সচিব এম এ মান্নান ২০০৫ সালে আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুস সামাদ আজাদের মৃত্যুর পর অনুষ্ঠিত উপ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন। পরে ২০০৬ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন এবং ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর-শান্তিগঞ্জ) আসন থেকে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সেসময় জাতীয় সংসদের সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই আসন থেকে বিজয়ী হয়ে সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পান এম এ মান্নান। পরে ২০১৮ সালে তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত হয়ে পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি।

সর্বশেষ এ বছরের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে জাতীয় সংসদের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হন এম এ মান্নান।

সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মুহিবুর রহমান মানিককে মঙ্গলবার  রাত ৯টার দিকে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র‍‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍‍্যাব)।

সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান মানিক ১৯৯১ সালে গণতন্ত্রী পার্টির মনোনয়নে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ৮ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসাবে ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুনামগঞ্জ ৫ ( ছাতক - দোয়ারাবাজার) আসন থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন। ১৯৯৪ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। পরে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। অষ্টম জাতীয় সংসদে ২০০১ সালে একই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি পরাজিত হন। পরে ২০০৮,২০১৪, ২০১৮ ও সর্বশেষ ২০২৪ সালের  জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। 

গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গঠিত জাতীয় সংসদে তিনি সরকারি প্রতিশ্রুতি সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পান।


ওয়াইএফ/০২

সিলেট প্রতিক্ষণ